এতো কম বয়সে একজন সফল উদ্যোক্তা হলেন কিভাবে?
রাশাদ কবির: ছোটবেলা থেকেই দেশের জন্য কিছু করতে চাইতাম। এটা আমার প্যাশনও বটে। আমি যখন পড়াশোনা করতাম তখন থেকেই আইসিটি সেক্টরে আমার ব্যাপক আগ্রহ ছিল। মূলত আমার স্বপ্ন আর পরিশ্রমই আমাকে সফল করেছে। আমাদের দেশে তরুণদের আইটি সেক্টরে ব্যাপক আগ্রহ আর তরুণরা সম্ভাবনাময়। যদি তরুণদের নিয়ে কাজ করা যায় তাহলে আমাদের দেশ আইটি সেক্টরে এক নম্বরে অবস্থান করবে। ৭১ আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্যে আমার অন্যরকম একটা আবেগ কাজ করে, তাই আমার কোম্পানির নামও রেখেছি WebSolution28.com, লোগোতেও বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে।
আপনার WebSolution28.com বতমানে কি কি কাজ করছে?
রাশাদ কবির: 2019 সালের অক্টোবর মাস থেকে jhasan28 It Solution এর মাধ্যমে WebSolution28.com-এর যাত্রা শুরু হয়। আমরা মূলত Website নিয়ে কাজ করি। খুব সম্প্রতি এটুআই এর সাথে আমরা যৌথভাবে বিজ্ঞানের রাজ্যে নামে একটি গেমস নিয়ে কাজ করছি। এটা বাংলাদেশের প্রথম এডুকেশনাল গেমস। যা ক্লাস সিক্স, সেভেন ও ক্লাস এইটের বাচ্চাদের জন্য অনেক সহায়ক হবে। খুব শীঘ্রই এটা উদবোধন করা হবে । আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপস হলো ‘ক্রিকেট বাংলাদেশ’। খেলাধুলার লাইভ আপডেট নিউজসহ সবকিছু পাবেন এতে। এই মোবাইল অ্যাপটি গুগল প্লে-স্টোর থেকে ইতোমধ্যে ৫ লক্ষাধিকবার ডাউনলোড হয়েছে।ইচ্ছা আছে তরুণদের বিজ্ঞানমনস্ক করার জন্য সামনে আরো অনেক কাজ করবো।
আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন?
রাশাদ কবির: বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর আইসিটি। এ বিষয়ে বলতে গেলে আমাকে একটু পেছনে যেতে হবে। ২০০৮ সালে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘ভিশন ২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা করলেন তখন অনেকেই হাসাহাসি করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের কাছে আর স্বপ্ন নয়। ২০০৯ সালে আইসিটি সেক্টর থেকে যেখানে মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার আয় হতো বতমানে সেই আয়ের পরিমাণটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারে। আমরা আশাকরছি ২০১৮ সালে সেটা গিয়ে দাঁড়াবে ১ বিলিয়ন ডলারে এবং ২০২১ সালে সেটা গিয়ে দাঁড়াবে ৫ বিলিয়ন ডলারে। আইটি সেক্টরে আমাদের কাজের বেশকিছু স্বীকৃতিও পেয়েছি। গার্টনার বাংলাদেশকে আইটি সেক্টরে শীর্ষে পৌছাবে এমন ৩০ টি দেশের তালিকায় রেখেছেন। কেপিএমজি আউটসোর্সিংয়ে সফল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে রেখেছেন উপরের সারিতে। বিশ্বব্যাংক ১৭ টি দেশের আইসিটি সেক্টরে লগ্নি করার কথা ভাবছে। তারমধ্যে আছে বাংলাদেশও। আমরা ধারাবাহিকভাবে শেষ তিনবার ডব্লিউএসআইএস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। আইসিটি সেক্টর একটি ক্রমবর্ধমান সেক্টর। এই সেক্টরের আশাজাগানিয়া অনেক কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে।
আইসিটি সেক্টরের সম্ভবনার জায়গাটা কোথায়? আমরা কেন আশাবাদি হবো…
রাশাদ কবির: বাঙালি বীরের জাতি। আমাদের যেকোন ধরনের পরিস্থিতিতে লড়াই করার মানসিকতা রয়েছে। আইসিটি সেক্টরে আমরা উদীয়মান । ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে আমরা অনেকটা পথ এগিয়ে গেছি। আর আমাদের এই এগিয়ে যাওয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। এই তরুণরাই আগামীতে আইসিটি সেক্টরে আরো ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখায়। এই তরুণদের সহজেই প্রশিক্ষণ দিয়ে চাহিদা মাফিক দক্ষ করে তোলা সম্ভব। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে আইসিটির বিভিন্ন পণ্যের মূল্য ভালো। আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি কমিটমেন্ট এবং কোয়ালিটি ঠিক রাখলে আমরা যেকোন দেশের চাইতে ভালো করবো। ইতোমধ্যে ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার ছড়িয়ে গেছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। তরুণ প্রজন্মই পারে আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
সামনেই বেসিস নিবাচন। পরিচালক পদে আপনি একজন স্বতন্ত্র এবং সবকনিষ্ঠ প্রাথী। একজন তরুণ এবং সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা হিসেবে বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন। নিবাচিত হলে এই সেক্টরের জন্য আপনি কি করতে চান?
রাশাদ কবির: আমার সম্বন্ধে বেশ কিছু মানুষের মন্তব্য ‘অভিজ্ঞতা কম’। আমার মতে অভিজ্ঞতা হয় কাজ দিয়ে,বয়স দিয়ে নয়। একটি কথা আছে,যার হয় তার নয়েই হয়, আর যার হয়না আর নব্বইতেও হয় না।” বয়সে কম হলেও আমি আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক কাজ করার চেষ্টা করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো এই সেক্টরের উন্নয়নে ভালো কিছু করার মনোবাসনা আমার রয়েছে। চারদিকে তারুণ্যের জয়জয়কার। তারুণ্যের প্রাণশক্তিতে ভর করে সকলকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আর বেসিসে তরুণদের সম্পৃক্ততা খুব জরুরি। পরিকল্পনা প্রণয়নে উচ্চ পর্যায়ের সদস্যরা থাকলেও তরুণদের জন্য আরো সুন্দর সাপোর্ট প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে বেসিসে প্রবীণ ও তরুণদের মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতে চাই। আইসিটি খাতকে আমি ২ ভাগে দেখি এক. সার্ভিস দুই. প্রোডাক্ট তৈরি। শুধু সার্ভিস দিলেই চলবে না,বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের ভালো প্রোডাক্টও তৈরি করতে হবে। মার্কেটিংয়ের বিষয়েও দিতে হবে বিশেষ গুরুত্ব। বাংলাদেশে ১ হাজারের বেশি সফটওয়্যার কোম্পানি রয়েছে। কিন্ত দক্ষ আইটি মার্কেটিং এবং সেলস প্রফেসনালস ২০০ও হবে না । আইটি ডেভেলপারদের সঙ্গে আইটি মার্কেটিং এবং সেলস প্রফেসনালসদের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। আমি নিবাচিত হলে সকলের অংশগ্রহণে,সবার সুচিন্তিত মতামত নিয়ে স্বমন্বিতভাবে দেশের আইটি সেক্টরে অবদান রাখার চেষ্টা করবো। বর্তমানে দেশে ৬ কোটি ২০ লাখ ইন্টারনেট গ্রহাক রয়েছে,যা ডিজিটাল বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। বেসিসকে নবীন এবং প্রবীণদের মিলনক্ষেত্র করে একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করতে চাই।
আমি বিশ্বাস করি, আমার মত বয়সী তরূণদের স্বপ্ন দেখার দিন শেষ,এখন সময় স্বপ্ন বাস্তবায়নের। বেসিস নির্বাচনে যদি নির্বাচিত হতে পারি,তাহলে বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি সেটা হয়তো আরো সহজতর হবে। কিন্ত যদি নির্বাচিত না হতে পারি, আমি একটুও হতাশ হবো না । হতাশ হওয়া তরুণদের কাজ নয়। বাংলাদেশে আর বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি, ইনশাল্লাহ সেটা বাস্তবায়ন করবোই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সৃষ্টিকর্তা যদি সহায় হোন, তাহলে বাংলাদেশ থেকেই তৈরী হবে ভবিষ্যত ফেসবুক, গুগল কিংবা লিঙ্কডিনের মতো বিশ্বমানের প্রোডাক্ট ।
সবশেষে আপনার স্বপ্ন 'WebSolution28.com’–এর ড্রিম সম্পর্কে বলুন..
রাশাদ কবির: আমরা আমাদের যাত্রাপথকে দীর্ঘায়িত করতে চাই। যাত্রা পথে সঙ্গে নিতে চাই অসংখ্য সফলতার গল্প। WebSolution28.com বাংলাদেশ লিমিটেড আইটি সেক্টরে ল্যান্ডমার্ক কিছু করতে চায়, যা শুধু দেশে নয় বিশ্ব বাজারেও প্রতিনিধিত্ব করবে। একদল তরুণ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে WebSolution28.com। ইতোমধ্যে বেশকিছু বড় কাজ করেছি যেটা ব্যয়সায়িক সফলতার পাশাপাশি শিক্ষায় অবদান রাখছে। একটি কথা দিয়েই শেষ করতে চাই ; ইনশাল্লাহ এমন কিছু করবো যেনো আমাদের লাল সবুজের পতাকার সম্মান বাড়িয়ে দিতে পারি